গ্লোকোমা রোগ: কারণ, উপসর্গ, চিকিৎসা ও প্রতিরোধ

 

🧿 আমরা এই যান্ত্রিক জীবনে অনেক কাজ করে থাকি। কিন্তু এই কাজের ফাঁকে আমরা আমাদের শরীর এবং শরীরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ গুলোর দিকে কতটুকু নজর রাখি বা এর যত্ন নেই? 

 না ! সত্য কথা বলতে আমরা বর্তমান সময়ে এমন ব্যস্ত হয়ে পরেছি যে নিজের প্রতি খেয়ার রাখার সময় আমাদের নেই। 

আমাদের শরীররের একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ হলো চোখ। এই চোখকে আমরা সারা দিন অনেক কাজে লাগাইল, অথচ সে অনুযায়ী তাকে তেমন বিশ্রাম দেই না। আমাদের দৈনিক ৭ থেকে ৮ ঘন্টা ঘুমানো প্রয়োজন। তাও আমরা কয়জনে করে থাকি। এই ভাবে আমাদের চোখের উপর চাপ পরতে পরতে চোখের অনেক অসুখ হয়ে থাকে। তার মধ্যে একটি মারাত্ত্ব রোগ হলো গ্লোকোমা। জ্বি হ্যাঁ আজ আমি গ্লোকোমা রোগ সর্ম্পকে কিছু লেখার চেষ্টা করবো।


 

গ্লোকোমা (Glaucoma) হলো চোখের একটি গুরুতর রোগ, যেটিকে অনেকেই “দৃষ্টিশক্তির নীরব চোর” (Silent thief of sight) বলে থাকেন। কারণ, এটি ধীরে ধীরে দৃষ্টি নষ্ট করে ফেলে এবং অনেক সময় রোগী টেরই পান না। একবার দৃষ্টি নষ্ট হয়ে গেলে আর ফিরে আসে না। তাই গ্লোকোমা সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান রাখা সবার জন্য জরুরি।


🔎 গ্লোকোমা কী?

চোখের ভেতরে একটি তরল (Aqueous humor) সবসময় তৈরি হয় এবং তা নির্দিষ্ট পথে বের হয়ে যায়। যখন এই তরল সঠিকভাবে বের হতে পারে না, তখন চোখের ভেতরের চাপ বেড়ে যায়। এর ফলে অপটিক নার্ভ ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং ধীরে ধীরে দৃষ্টি শক্তি নষ্ট হয়।

⚠️ গ্লোকোমার কারণ 

  • চোখের ভেতরের তরল জমে যাওয়া।
  • চোখে আঘাত বা অস্ত্রোপচারজনিত জটিলতা।
  • ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ ইত্যাদি দীর্ঘমেয়াদী রোগ।
  • বয়স বেশি হওয়া (বিশেষ করে ৪০ বছরের পর)।
  • দীর্ঘদিন স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধ ব্যবহার।
  • পরিবারে কারও গ্লোকোমা থাকলে ঝুঁকি বেশি। 

🌀 গ্লোকোমার ধরন 

  • ওপেন-অ্যাঙ্গেল গ্লোকোমা (Open-angle): সবচেয়ে সাধারণ ধরন। ধীরে ধীরে দৃষ্টি নষ্ট হয়।
  • অ্যাঙ্গেল-ক্লোজার গ্লোকোমা (Angle-closure): হঠাৎ চোখ ব্যথা, মাথা ব্যথা, বমি হয়। জরুরি চিকিৎসা প্রয়োজন।
  • জন্মগত গ্লোকোমা (Congenital): শিশুদের জন্ম থেকেই হতে পারে। চোখ বড় হয়ে যায়, পানি পড়ে, আলোতে তাকাতে পারে না। 

🩺 গ্লোকোমার উপসর্গ

  • চোখে ঝাপসা দেখা।
  • আলোতে তাকালে রঙধনুর মতো হ্যালো দেখা।
  • চোখে চাপ বা ব্যথা।
  • মাথা ব্যথা, কখনও বমি।
  • পার্শ্বদৃষ্টি (side vision) ধীরে ধীরে হারিয়ে যাওয়া।
👉 অনেক ক্ষেত্রেই শুরুতে কোনো উপসর্গ থাকে না, তাই নিয়মিত চেকআপ অত্যন্ত জরুরি।

🔍 গ্লোকোমা নির্ণয়ের পরীক্ষা

চোখের ডাক্তার সাধারণত যেসব পরীক্ষা করেন –

  • চোখের চাপ মাপা (Tonometry)।
  • চোখের স্নায়ু দেখা (Ophthalmoscopy)।
  • দৃষ্টিসীমা পরীক্ষা (Perimetry)।
  • কর্নিয়ার পুরুত্ব পরীক্ষা (Pachymetry)। 

💊 গ্লোকোমার চিকিৎসা

গ্লোকোমার একবার হওয়া ক্ষতি আর ফিরিয়ে আনা যায় না। তাই লক্ষ্য হলো চাপ নিয়ন্ত্রণে রাখা

  • চোখের ড্রপ: নিয়মিত ব্যবহার করতে হয়।
  • ওষুধ: প্রয়োজনে খেতে দেওয়া হয়।
  • লেজার চিকিৎসা: তরল বের হওয়ার পথ খোলা হয়।
  • অপারেশন: প্রয়োজনে নতুন পথ তৈরি করে তরল বের করা হয়।

🛡️ গ্লোকোমা প্রতিরোধ 

  • বছরে অন্তত একবার চোখ পরীক্ষা করুন (৪০ বছরের পর অবশ্যই)।
  • ডায়াবেটিস ও রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখুন।
  • পরিবারে কারও গ্লোকোমা থাকলে নিয়মিত চেকআপ করুন।
  • চোখে ব্যথা বা হঠাৎ দৃষ্টি ঝাপসা হলে অবহেলা করবেন না। 

✅ সারসংক্ষেপ

গ্লোকোমা এমন একটি রোগ যা সময়মতো ধরা না পড়লে স্থায়ী অন্ধত্বের কারণ হতে পারে। তাই নিয়মিত চোখ পরীক্ষা করা, সচেতন থাকা এবং প্রয়োজনে দ্রুত চিকিৎসা নেওয়া অত্যন্ত জরুরি।

 

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Please Select Embedded Mode To Show The Comment System.*

নবীনতর পূর্বতন