খনার বচন — বাংলার প্রাচীন জ্ঞানের অমূল্য ধন

 

                                                                     ছবি: সংগ্রহীত

🔶 ভূমিকা

বাংলার ইতিহাসে “খনা” একটি কিংবদন্তি নারী চরিত্র। তিনি ছিলেন জ্যোতিষ ও কৃষিভিত্তিক বচনের মহান উদ্ভাবক। “খনার বচন” শুধু কথামালা নয় — এটি বাংলার কৃষিভিত্তিক সমাজজীবনের অভিজ্ঞতার সারাংশ। প্রাচীনকালে মানুষের কৃষিকাজ, আবহাওয়া, সময়জ্ঞান ও সামাজিক চালচলন এই বচনের মাধ্যমে উঠে এসেছে।


🌾 জনপ্রিয় খনার বচন ও তার ব্যাখ্যা

📜 ১.

"আষাঢ়ে ঢেঁকি, ভাদ্রে চাকি, আশ্বিনে কল, কার্তিকে ফল।"
অর্থ:
আষাঢ় মাসে ধান লাগাতে হয়, ভাদ্রে আগাছা পরিষ্কার করতে হয়, আশ্বিনে কলা গাছ রোপণ ভালো হয়, আর কার্তিক মাসে ফল পাওয়া যায়। এটি কৃষির সময়জ্ঞান শেখায়।


📜 ২. 

"আগে দেখি জমির ধরণ, পরে করি চাষাবাদ ধরন।"

অর্থ:
জমির প্রকৃতি বুঝে তবেই ফসলের পরিকল্পনা করতে হবে। অন্ধভাবে চাষ করলে ভালো ফলন হয় না।


📜 ৩.

"যে জমিতে সেউটি বটে, সে জমিতে ধান ফলে বেশি।"
অর্থ:
যে জমিতে ছোট মাছ (সেউটি) থাকে, তার জলধারা ভালো থাকে, তাই ধানের ফলনও বেশি হয়।


📜 ৪.

"কেতু যতই ডাকে, ধান ততই ফাকে।"
অর্থ:
কেতু পাখির ডাক ধানে পোকামাকড় বা রোগের সংকেত দেয়। ফলে ফলন হ্রাস পায়।


📜 ৫.

"পঁচা মাটির ধান ভালো, পঁচা চালের ভাত ভালো নয়।"
অর্থ:
জমি স্যাঁতসেঁতে বা আর্দ্র হলে ধানের জন্য ভালো, কিন্তু পুরোনো বা পঁচা চাল দিয়ে সুস্বাদু ভাত হয় না।


📜 ৬.

"কাস্তে মুখে ফসল কাটে, কথা মুখে কলহ বাড়ে।"
অর্থ:
যেমন কাস্তে দিয়ে ফসল কাটা হয়, তেমনি মানুষের মুখের কথা সম্পর্কও কাটতে পারে। তাই জিভের ব্যবহার বুঝে করতে হয়।


📜 ৭.

"গাছে ওঠে কাঁঠাল, ব্যস্ত থাকে পেঁচা; নিজের কাজ না করে, হুজুগে মিছে খ্যাচা।"
অর্থ:
নিজের দায়িত্ব ফেলে অন্যের কাজে নাক গলালে লাভ হয় না, বরং ক্ষতিই হয়।


🧠 খনার বচনের গুরুত্ব

🔹 প্রাকৃতিক অভিজ্ঞতার ফল
🔹 কৃষি-নির্ভর জীবনের নির্দেশনা
🔹 আবহাওয়া ও ঋতুচক্র সম্পর্কে গভীর অন্তর্দৃষ্টি
🔹 সমাজ ও আচার-ব্যবহার নিয়ে জীবনমুখী শিক্ষা


🏁 উপসংহার

খনার বচন কেবল কৃষি বা আবহাওয়ার নির্দেশনা নয়, এটি বাংলার গ্রামীণ সভ্যতার চিরন্তন জ্ঞান। আধুনিক প্রযুক্তির যুগেও এই বচনগুলো আমাদের শেকড়ের সঙ্গে যুক্ত রাখে এবং সময়মতো কাজ করার মূল্যবোধ শেখায়।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Please Select Embedded Mode To Show The Comment System.*

নবীনতর পূর্বতন