রবিবার, ৪ নভেম্বর, ২০১৮

ভিটামিন সি এর ডিব্বা

বাংলাদেশের মাটিতে অনেক ধরনের উদ্ভিদ হয়ে থাকে। ফলজ, বনজ, ঔষধি ও বিভিন্ন ধরনের ফুল গাছ। তেমনি আমাদের দেশে এমন অনেক ফলজ উদ্ভিদ আছে যা মানুষের পুষ্টি ও খাদ্যের চাহিদায় থাকে। এই সকল ফলের মধ্যে অনেকগুলো ঔষধি গুনসম্পণ। তেমনি একটি ফল হলো আমলকি। যা আমাদের দেশ প্রচুর পরিমানে হয়ে থাকে। ত্রিফলা হিসেবে পরিচিত তিনটি ফলের মধ্যে আমলকী একটি।

আমলকী এক প্রকার ভেষজ ফল। এর ইংরেজি নাম - amla. এর বৈজ্ঞানিক নাম- Phyllanthus emblica. এর স্বাদ খাওয়ার সময় অনেকটা কষ কষ লাগলেও পরে মুখে মিষ্টি ভাব আসে। 



পুষ্টি গুণ: 

আমলকীতে প্রচুর পরিমানে ভিটামিন সি থাকে। পুষ্টি বিশেষগ্যদের মতে এই ফলে পেয়ারা হতে ৩ গুন ও কাগজি লেবুর চেয়ে ১০ গুণ বেশি ভিটামিন সি থাকে। কমলার চেয়ে ১৫ গুণ, আপেলের তুলনায় ১২০ গুণ আমের তুলনায় ২৪ গুণ ও কলার চেয়ে ৬০ গুণ বেশি ভিটামিন সি আছে।
আমলকীর ভিটামিনের পুরিমান হিসেবে দেখা যায় যে, আমরা যদি প্রতি দিন  একটি করে আমলকী খেতে পারি, তবে ভিটামিন ট্যাবলেট খাওয়ার প্রয়োজন হবে না।



উৎপাদিত পন্য:

আমলকী থেকে অনেক খাবার তৈরি করা যায়। আমলকীর আচার, মোরব্বা ও আমলকী ভর্তা। এরছাড়াও বাজারে আমলকীর পাউডার পাওয়া যায় যা রান্নায় ব্যবহার হয়। বাজারে শুকনা আমলকী পাওয়া যায় যা ভিজিয়ে শরবত খাওয়া হয়। কাঁচা আমলকীও শরতব করে খাওয়া যায়।



এর উপকারিতা ও ব্যবহার:

আমলকী চুলের যত্নে ব্যবহার করা হয়। এটি চুলের গোড়া শক্ত করে, চুল বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। এটি চুলের খুসকি দুর করে এবং চুল পাকা থেকে রক্ষা করে। এর রস কোষ্ঠকাঠিন্য ও পাইলসের সমস্যা দূর করতে পারে। পেটের গোলযোগ, বদহজম দুর করে। পেটে গ্যাস এ্যাসিডিটিতে আমলকী কাজে দেয়। প্রতি দিন সকালে মধু ও আমলকীর রস খেলে ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পায়। চোখের দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধি, খাবারে রুচি বাড়ায়।  এ্যাজমার রোগিদের জন্য এর জুস খুব উপকারী। সর্দি- কাশি, রক্তশূণ্যতায় বেশ ভালো কাজ করে। 

পরিবেশ বিপর্যয়ের প্রভাবে প্রাণীকুল




সবুজ শ্যামল আমাদের এই দেশ বাংলাদেশ। আমাদের এই দেশ সুন্দর প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর। কিন্তু এখন তা আর আগের মত নেই। সবকিছু এখন ধীরে ধীরে বদলে যাচ্ছে। পরিবতর্ন আসছে আমাদের ছয় ঋতুতেও। ঋতু বৈচিত্র ঠিক আগের মত নেই। জলবায়ুর পরিবর্তন ও উষ্ণতার কারণে বৃদ্ধি পাচ্ছে অতিবৃষ্টি, অনাবৃষ্টি, বন্যা আরও অনেক প্রাকৃতিক দুর্যোগ। যার ফলে এর ক্ষতিকর প্রভাব পরছে আমাদের পরিবেশ ও প্রাণীকুলে। এই ধরনের দুর্যোগ পরিবেশ বিপর্যয়ের ফলে বন ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে, যার প্রভাব বৈচিত্রময় প্রাণী কুলের উপর পরে। এরই ধারাবাহিকতায় আমাদের দেশ থেকে অনেক প্রাণী ও উদ্ভিদ বিলুপ্ত হয়ে গেছে এবং আরও অনেক প্রাণী ও উদ্ভিদ বিলুপ্তির পথে।


আমাদের এই পরিবেশ ধ্বংসের জন্য আমরাই প্রথমত দ্বায়ি। নগরায়নের নামে বনভূমি উজার করে লোকালয় গড়েতুলছি। অনেক জলাশয়, খাল ভরাট করে আমাদের বসবাসের উপযোগী করে তুলছি। 


অতছ এই কাজের মাধ্যমে আমরা আমাদের বৈচিত্রময় প্রাণীকুলের বসবাসের জায়গা দখল করে তাদের বিপদের মুখে নিয়ে যাচ্ছি। বর্তমানে বাংলাদেশের অনেক পশু, পাখি, জলজ প্রাণী ও উদ্ভিদ বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে।


পৃথিবীতে সর্ব প্রথম জীববৈচিত্র্যের তালিকা তৈরি করা হয় ১৬০০ খ্রিস্টাব্দের পর থেকে। এর আগে কোন দেশ এই জীববৈচিত্র্যের তালিকা নিয়ে ভাবেনি। জীববৈচিত্র্যের মহা সংকটের কথা ভেবেই এই চিন্তা করা হয়। ইতিমধ্যে বিলুপ্ত হয়েগেছে অসংখ্য উদ্ভিদ এবং প্রাণীকুল। আবার অনেক উদ্ভিদ ও প্রাণী আছে যারা বিলুপ্তির পথে। বাংলাদেশেও রয়েয়েছে এমন অনেক উদ্ভিদ ও প্রাণী।
ম্যামালিয়ান কমিউনিটি অফ বাংলাদেশ এর মতে ১০০ বছরে বাংলাদেশের ৩১ প্রজাতির প্রাণী বিলুপ্ত হয়েছে। আরো প্রায় ৩৯০টি প্রাণী বর্তমানে হুমকির মুখে।

বিলুপ্ত প্রাণীর মধ্যে রয়েছে- ডোরা কাটা হায়েনাধূসর নেকড়ে, নীলগাই, বনগরু, বনমহিষ, গন্ডার, বারো শিঙা হরিণ, কৃষ্ণষাঁড়, মন্থর হরিণ, ভালুক।
মহাবিপন্ন প্রাণীদের তালিকায় রয়েছে- রয়েল বেঙ্গল টাইগার, হাতি, ভোঁদড়, লামচিতা, চিতা, বনরুই, উল্লুক, চশমা পরা হনুমান, বনগরু, সাম্বার হরিণ, প্যারাইল্লা বানর, হিমালয়ান ডোরা কাঠবিড়ালী  কালো ভালুক

পাখির মধ্যে বিলুপ্ত হয়েছে- লালমুখ দাগিডানা, সারস পাখি, ধূসর মেটে তিতির বাদা তিতির পাখি, বাংলার বিখ্যাত বাদি হাঁস, গোলাপি হাঁস, বড় হাড়গিলা বা মদনটাক, ধলাপেট বগ, সাদাফোঁটা গগন রেড, রাজ শকুন, দাগি বুক টিয়াঠুঁটি, লালমাথা টিয়াঠুঁটি, গাছ আঁচড়া, সবুজ ময়ূর চিরতরে দেশ থেকে হারিয়ে গেছে

উভচর প্রাণীদের তালিকা- চামড়া ঝোলা ব্যাঙ এবং কেঁচোর মতো দেখতে নীল রঙের একটি নতুন উভচর প্রাণীও মহাবিপন্ন উভচর প্রাণীর তালিকায় উঠে এসেছে। বিপন্নের তালিকায় এসেছে চিত্রিত ব্যাঙ, বেলুন ব্যাঙ, চ্যাপ্টা মাথা ব্যাঙ, ঝরনা সুন্দরী ব্যাঙ, বড় গেছো ব্যাঙ, মিঠা পানির কুমির, ঘড়িয়াল, বিভিন্ন প্রজাতির কাছিম।

এই সকল প্রাণীকুলকে বিপন্নের হাত থেকে রক্ষার জন্য আমাদের এগিয়ে আসতে হবে। এরদেরকে শিকরা করা, পরিবেশ ও বন ধ্বংস করা বন্ধ করতে হবে। এদের বসবাসের জন্য পরযাপ্ত বনভূমি গড়ে তুলতে হবে। সরকারের পাশাপাশি জনগনকেও সচেতন হতে হবে। তাই আমাদের উচিৎ গাছ লাগানো, বৃক্ষরোপন করা।

শুক্রবার, ২ নভেম্বর, ২০১৮

চ্যাপা শুঁটকি ভর্তা

বাঙালীর রসনা বিলাসে শুঁটকি মাছের জুড়ি নেই। তেমনি একটি শুঁটকি মাছ হলো চ্যাপা শুঁটকি।  চ্যাপা শুঁটকি উৎপাদনের মূল কাঁচামাল হিসেবে পুঁটি মাছ ব্যাবহার করা হয়। বাংলাদেশের মানুষের কাছে চ্যাপা শুঁটকি একটি পছন্দের খাবার। এই চ্যাপা শুঁটকি আমিষের একটি সহজলভ্য উৎস । আমাদের দেশের অনেকেই এর বিশেষ বৈশিষ্ট্য মণ্ডিত স্বাদ এবং গন্ধের জন্য একে খাদ্য হিসাবে ব্যবহার করে থাকে।
আমাদের দেশে চ্যাপা শুঁটকি বিভিন্ন অঞ্চলে বিভিন্ন নামে পরিচিত। যেমন- চ্যাপা, চ্যাপা শুঁটকি, সিধল বা সিদঈল, হিদল (আঞ্চলিক নাম ময়মনসিংহ ও কুমিল্লা অঞ্চল), ব্যারমা (পার্বত্য অঞ্চলে)। 
বাংলাদেশে প্রাচীনকাল থেকেই চ্যাপা উৎপাদনের প্রধান এলাকা হিসেবে চিহ্নিত বৃহত্তর সিলেট, ময়মনসিংহ, কুমিল্লা। তাই এই অঞ্চলের হাওর-বাঁওড় ও নিচু জলাশয়ে প্রচুর পরিমাণে পুঁটিমাছ ধরা পড়ে। এছাড়াও মৌলভীবাজার ও সুনামগঞ্জের হাওড় এলাকা, কিশোরগঞ্জ, নেত্রকোনার খালিয়াজুরি, মদন, মোহনগঞ্জ ও কলমাকান্দার বিস্তীর্ণ হাওর এলাকা, কুলিয়ারচর ও মোহনগঞ্জের জলমহাল ও মৎস্য অবতরণ স্থান এবং কুমিল্লার নদী অববাহিকা এলাকায় সুপ্রাচীন কাল থেকে চ্যাপা শুঁটকি তৈরি হয়ে আসছে।
চ্যাপা শুঁটকি:
চ্যাপা শুঁটকি তৈরি জন্য উত্তম মাছ হচ্ছে পুঁটি বা জাঁত পুঁটি। এটি মাঝারি আকারের মাংসল, পরিপুষ্ট ও লম্বাকৃতির মাছ যা দিয়ে সর্বোৎকৃষ্ট মানের চ্যাপা শুঁটকি তৈরি হয়। এছাড়া আশুগঞ্জ এলাকায় সামুদ্রিক ফাইস্যা ও অন্যান্য কাঁটাযুক্ত ছোট মাছ দিয়েও চ্যাপার মত গাঁজনকৃত শুঁটকি তৈরি করা হয় কিন্তু এর স্বাদ ও গন্ধ জাঁত পুঁটির চ্যাপা থেকে সম্পূর্ণ আলাদা।বাংলাদেশে পুঁটি বা জাঁত পুঁটি, তিত পুঁটি, সরপুঁটি মুলত চ্যাপা শুঁটকি তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। 

 তো আজ আমরা শিখবো চ্যাপা শুঁটকি ভর্তার রেসিপি। এই ভর্তা তৈরিতে ছিলেন আমাদের শ্রদ্ধেয় পিয়াস ভাই।

উপকরণ: 
চ্যাপা ভর্তার জন্য আমাদের যা যা প্রয়োজন-
১। ৪টি চ্যাপা শুঁটকি
২। আধা কেজি পেঁয়াজ
৩।কয়েকটা রশুন
৪। কিছু আদা কুচি
৫। আর প্রয়োজন মত ঝালের জন্য কাঁচা মরিচ
৬। লবন


প্রস্তুত প্রণালী: 
এবার চ্যাপা ভর্তার জন্য প্রথমে একটি করাইয়ে আধা কাপ সোয়াবিন তেল চুলায় ভালো করে গরম করতে হবে। পরে এক এক করে পেঁয়াজ, রসুন, মরিচ ও আদা বাটা গরম তেলে ভালো করে ভেজে নিতে হবে। পরে চ্যাপা শুঁটকি গুলো ভালো ভাবে ধুয়ে এর মধ্যে দিয়ে দিতে হবে। ১ চামচ লবন বা স্বাদ মত দিতে হবে। এর পর ভাজা কাঠি দিয়ে ভালো ভাবে শুঁটকি মাছ ভেঙ্গে ভাজা ভাজা করতে হবে। হয়ে গেল আমাদের স্বাদের চ্যাপা শুঁটকি ভর্ত
(যারা বেশি ঝাল পছন্দ করেনন না তারা সকল উপকর দেয়ার আগে কাঁচা মরিচ দিয়ে ভেজে নিলে ঝাল কম হবে।)
নিচের ছবিটি আমাদের করা চ্যাপা ভর্ত। এবার হবে স্বাদের রাতের খাবার।




বি: দ্র: চ্যাপা ভর্তা মানে কিন্তু মাছ ভর্তা নয়। এখানে পেয়াজ, রসুন ও কাঁচা মরিচ ভর্তা বলা যায়। এখানে শুধু চ্যাপা শুঁটকি ফ্লেবার ও স্বাদের জন্য।